রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৪:০৮ পূর্বাহ্ন

ভোগের জন্য লম্বা লাইন : হংকংয়ে পুজোয় মিলবে না রেস্তরাঁ

ভোগের জন্য লম্বা লাইন : হংকংয়ে পুজোয় মিলবে না রেস্তরাঁ

স্বদেশ ডেস্ক: হংকংয়ের বাঙালিরা নিউ ইয়র্ক, শিকাগো, লন্ডনের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে গত কুড়ি বছর ধরে সাড়ম্ভরে দুর্গাপুজো পালন করে চলেছেন। এবার একুশ বছরে পা দিল এখানকার পুজো। শুরু হয়েছিল কতিপয় উৎসাহী বাঙালির উদ্যোগে। সেই পুজো এখন আকারে ও খ্যাতিতে অনেক বড় হয়েছে। ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘বিশ্ব বাংলা শারদ সম্মান’-এ ভূষিত হয়েছে এই পুজো, অন্যতম সেরা ‘প্রবাসী পুজো’ হিসেবে। পুজোর উদ্যোক্তা ‘হংকং বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন’ যেটি ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তারপরের বছর থেকেই দুর্গাপুজো শুরু করে দেয় তারা। প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরা এখনও আছেন। অনেক তরুণ তুর্কি এসে এই পুজোকে আরও সমৃদ্ধ করেছেন। পুজোর আয়োজন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এখন প্রতিমা ও মন্ডপসজ্জায় নিত্যনতুন শৈল্পিক ভাবনাচিন্তার পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে। পুজোর খরচ আসে বিজ্ঞাপন, স্পনসরশিপ আর অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের চাঁদা থেকে। হংকংয়ের শতাব্দী-প্রাচীন ‘ইন্ডিয়া রিক্রিয়েশন ক্লাব’-এর লনে পুজো হয়। হংকংয়ে খোলা জায়গার বড়ো অভাব, তাই আইআরসি-র মুক্ত প্রাঙ্গণে সবুজ গালিচার ওপর পুজোর আয়োজন সকলেরই দারুণ পছন্দ হয়।
প্রবাসী বাঙালির কাছে পুজো মানে মিলনমেলা। হংকংয়ের কয়েকশো প্রবাসী বাঙালি তাদের বাৎসরিক আড্ডার ‘কোটা’ পূরণ করে নেন পুজোর এই কয়েকটা দিনে। আড্ডার সঙ্গে চলে কাজকর্ম, খাওয়াদাওয়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ছুটির দিনে পুজোতে ভিড় উপচে পড়ে। শুধু বাঙালি নয়, হংকংয়ের পুজো এখানকার ওড়িয়া, উত্তর ভারতীয়, বিহারি, মরাঠি, তামিল, তেলুগুদের মধ্যেও খুবই জনপ্রিয়।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এখানকার উৎসবের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নাচে, গানে, আবৃত্তিতে অনুষ্ঠান দারুণ জমে ওঠে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সলিল, হেমন্ত, কিশোর, লতা, সুকুমার, সত্যজিৎ বাদ পড়ে না কারও সৃষ্টি। অনুষ্ঠানের সময়ে পুজো-প্রাঙ্গণ ছোটখাটো ভারতবর্ষের রূপ ধারণ করে। পুজোর পরে বাৎসরিক অনুষ্ঠানে নামজাদা শিল্পীরা আসেন দেশ থেকে। পুজোর আর একটা আকর্ষণ হল ধুনুচি নাচ। পালা করে মহিলা ও পুরুষেরা মিলে প্রবল উৎসাহে ঢাকের তালে ধুনুচি হাতে দুলে ওঠেন।
হংকংয়ের প্রবাসী বাঙালিদের নতুন প্রজন্মও এই পুজোর জন্য মুখিয়ে থাকে। পুজোর আচার-আচরণ ও আবহ তাদের মনে গভীর কৌতূহল সৃষ্টি করে। সার বেঁধে অঞ্জলি দেওয়ার সময়ে সকলের মন্ত্রোচ্চারণ হয়তো পুরোহিতমশাইয়ের সঙ্গে ঠিক মেলে না, কিন্তু তাতে নিষ্ঠা ও আগ্রহে কোনও কমতি দেখা যায় না। পুজোর জোগাড় অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা মিলেমিশে করেন। পুজোর কয়েক দিন হংকংয়ের প্রবাসী বাঙালিরা, যাঁরা অনেকেই বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থায় উচ্চপদে আসীন, তাঁদের পেশাগত পরিচয় ভুলে গিয়ে পুজোর কাজে হাত লাগান। এ এক অন্য মজা। কেউ কাঁসর-ঘণ্টা বাজাচ্ছেন, কেউ ফল কাটছেন, কেউ চেয়ার সাজাচ্ছেন, কেউ আবার খাবারের জায়গায় তদারকি করছেন। দেখতে দেখতে চার দিন এ ভাবেই কেটে যায়।
পুরোহিতমশাই শক্তিদা অনেক বছর ধরে এই পুজো করছেন। পুরোহিতমশাই ও ঢাকিরা আসেন কলকাতা থেকে। ফাইবার গ্লাসের প্রতিমাও এসেছে কলকাতা থেকে। তবে প্রতিমা এক বার এলে কয়েক বছর ধরে সেটিকেই পুজো করা হয়। ভোগ রান্নার দায়িত্ব নেন সদস্যরাই। পুজোর চার দিনই দুপুরে ও রাতে পুজো-প্রাঙ্গণে খাবারের ব্যবস্থা থাকে। বিশুদ্ধ বাঙালি খাবার, যা হংকংয়ের ঝাঁ চকচকে রেস্তরাঁয় পাওয়া যায় না। তাই খাবার লাইনে ভিড় হয় ভালই!

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877